Description
শাওমি’র মাস্ক-পরহিত এলিয়েনের মতন দেখতে একজন সেদিন বানাচ্ছিল পারফিউমেন্সের প্রডাক্ট ! তবু তার শেষ রক্ষা হলো না…
অন্যান্যদিন খিলগাঁও শপ থেকে হলেও, শনিবারের Cash On Delivery-গুলো সাধারণত ওয়ার্কশপ থেকে সরাসরি বের হয়। ওয়ার্কশপটা বেশ মজার জায়গা। ১২৫ রকম ঘ্রাণের র’ ম্যাটেরিয়াল, প্রায় ২০পদের এসেনশিয়াল অয়েল, কয়েকহাজার প্যাকেট-বোতল, মানে তফরখানা আর কি। সুবাস বোতলজাত করতেও অতিক্রম করতে হয় কয়েকটা ধাপ। ঢাউস ইন্ট্যাক ক্যানগুলো থেকে মাঝারি একটা ঢালন-উপযোগী বোতলে লিক্যুইড ট্রান্সফার করা, সেখান থেকে কাচের বোতল, এরপরে রোলার-ক্যাপ-স্টিকার লাগিয়ে প্যাকেটজাত করে কিউসি টিমের কাছে হস্তান্তর ‘ নাও দেখো কোন খামতি আছে নাকি ‘ -_-
বেশ আগে বলেছিলাম, বিরল প্রজাতির কিছু মানুষ আছে যাদের নাক নির্দিষ্ট কিছু ঘ্রাণ সইতে পারেনা। ফ্রেগরেন্স-সেন্সিটিভ মানুষগুলো অমন কোন ঘ্রাণ টের পেলেই হাচির দমক শুরু হয়ে যায় সাথেসাথে! [পোস্টের লিংক এখানে ]। দুর্ভাগ্যজনক হোক আর সৌভাগ্যবশতই হোক, পুরো দুনিয়ার সেরকম লাখ বিশেক মানুষের একজন এখন লেখাটা লিখছে সৌভাগ্য এই কারণে, এই মানুষগুলোর কষ্ট-টা বুঝতে পারি সহজেই, তাদেরকে সন্দেহজনক ঘ্রাণগুলো এড়ায়ে চলতে বলি। দুর্ভাগা এই কারণে, আমাকে প্রত্যেকটা ঘ্রাণ নিয়েই কাজ করতে হয় একের পর এক, কাউকে বলতে পারিনা ‘নাহ, তমুক ঘ্রাণ-টা আমি বানাতে পারবো না’ প্রায় প্রতিটা কর্মব্যস্তদিনের শেষ হয় একনাগারে ৪০-৪৫টা হাঁচি আর প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে
বর্তমানে ফিরে আসি। iclickbazar এর Shantu ভাইয়াকে বলেকয়ে একখানা কিম্ভুতকিমাকার মাস্ক আনায়েছি সেদিন, আদতে ধুলোবালি-কুয়াশা ঠেকানোর জন্যে হলেও ফ্রেগরেন্স-মলিকিউল আটকাতে পারে কি না সেটা দেখাই উদ্দেশ্য ছিল। আল্লাহু আকবার, প্রায় ৯৫% ঘ্রাণ আটকে ফেললো জিনিসটা ! মনের আনন্দে একের পর এক প্রডাক্ট বানায়ে চলেছি, একবার আবিয়াদি অউদ পরক্ষণেই ইনফিম্যান তারপরেই স্পার্কলিং — নাহ, নাক টের পাচ্ছেনা কিছুই মোবাইল স্ক্রিনে তাকাতেই আনন্দ উবে গেল প্রায় পুরোটা। বাকিসব ডেলিভারিম্যানকে ততক্ষণে বিদায় দিলেও মিরপুর এরিয়ার ডেলিভারিগুলো দেওয়া হয়নি তখনো। ওয়ার্কশপের নিচে দাঁড়ায়ে আছে সেই অঞ্চলের ডেলিভারিভাই, ঘড়িতে বাজে পৌনে চারটা, আর ঠিক পাঁচটার মধ্যে সেথায় আর্জেন্ট ডেলিভারিও আছে!
সব ডেলিভারিই গুছানো শেষ, শুধু ডেলিভারিভাইএর নিজের জন্য করা অর্ডার-টা আধগোছালো হয়ে আছে। পোলোব্লু-পোলোরেড-ভারসাচে’র পাশাপাশি নিতে চেয়েছেন পাঁচটা আটমিলি Brut . তীব্র ঝাঁজালো, মশলাদার আর ম্যানলি,বিশেষ করে সাইক্লিস্টদের জন্য আদর্শ ঘ্রাণ! তাড়াহুড়ো করে তৈয়ার করতে গিয়ে খেয়াল এলো, সবই আছে শুধু ব্রুটের জন্য আলাদা করে রাখা ঢালন-উপযোগী মাঝারি বোতলটা খুঁজে পাচ্ছিনা এতকিছুর ভীড়ে। পাক্কা পাঁচমিনিট বিছরায়ে, ফোনে একাউন্টস-হেড এর দুইবার তাড়া খেয়ে সেটার আশা ছেড়ে সরাসরি ঢাউস ক্যান থেকেই ঢালার চেষ্টা…. অপচেষ্টা বলাই ভালো। ৩টা বেজে ৫৫মিনিটে তানভীর ভাই তার নিজের প্রডাক্টসহ আজকের ডেলিভারিগুলো বুঝে পেয়েছিল ঠিক ই, কিন্তু সেটা আতরচির ছোটভাইএর কাছ থেকে। কারণ আতরচি মশাই দুইপা ছড়ায়ে বসে আসে কারখানায়। তার দুইহাত বেয়ে পড়ছে অনেক অনেক ব্রুট…!
তারপর আর কি, হাত হয়ে গেলো পরশপাথর। যেখানেই হাত দেই সেখানেই ঘ্রাণ। ঠান্ডাপানি খেতে গিয়ে পুরো ফ্রিজ ব্রুটাক্রান্ত করে, সাবান দিয়ে কয়েকবার হাত ধুয়ে উলটো সেই সাবানকে ব্রুটময় করে তুলে ক্ষান্ত দিলাম, আম্মুকে অনুরোধ করতে হলো দুপুরের ভাত-টা মুখে তুলে খাইয়ে দেয় যেন! খাওয়ার সময় তো মুখোশ খুলতেই হবে, যেইনা খুললাম, ওমনি হ্যাচ্চোওওওও!
এই রাত সাড়েএগারটায় ব্রুটের তীব্রতা কমেছে একটু। পৃথিবীটাকে আবারো সুন্দর লাগছে খুব…
Leave feedback about this