আল্টিমেইট ম্যান

(2 customer reviews)

৳ 360.00

ধরুন ঢাকা শহরে নিজেদের একখানা ইয়ায়ায়া বড়ো বাড়ি করবার সুযোগ হয়েছে আপনার, আলহামদুলিল্লাহ্‌ । বাড়ির সাথে সাথে নতুন একটা শখ-ও হয়েছে, আসর স্বলাত পড়ার পরপর-ই ছাদে চলে গিয়ে ‘কিছু একটা’ করা । ছাদ ধরুন ৮তলা, ঢালাই করা পানির রিজার্ভার-সহ সাড়ে আট তলা!! রিজার্ভার এর উপর-টা ফাঁকাই বলা যায়, সাইড দিয়ে টবে অল্প কিছু রোজমেরি গাছ লাগায়েছিলেন পিজ্জাতে ছিড়ে দেওয়ার জন্য( বাব্বাহ, আপনি দেখি বেশ ভোজনরসিক !)। ছাদে গিয়ে আর কোনোদিকে না তাকায়ে সোজা সেই টাংকির উপরে উঠে সটান হয়ে শুয়ে পড়েন, দুচোখ মেলে আকাশের বিশালত্ব অনুভবের চেষ্টা করেন — শখ আসলে এটাই। শহুরে ধুলাবালি আপনাকে ছুতে পারে না, যেভাবে আপনি আকাশে অই দূর দিয়ে উড়ে চলা পাখিগুলোকে ছুয়ে দেখতে পারেন না..!

একদিন রুটিনমাফিক চলে গেলেন আপনার আস্তানা-তে। শীতের সময়, তবু আকাশ বড্ড বেশি মেঘলা, এই বুঝি বৃষ্টি নামে ( ঠিক আজকের পরিবেশটাই কল্পনা করতে পারেন) । আজ আর চোখ মেলে নয়, চোখ বুজে রয়েছেন আপনি, কল্পনায় আছে বিশাল আসমান আর মন ভরে টেনে নিচ্ছেন বাষ্পরূপী বৃষ্টিযুক্ত পবন-এর ঘ্রাণ-টুকু.. রোজমেরি’র কড়া ঘ্রাণ-টাও নাকে একটু একটু আসছে বৈকি! ঠিক সেই সময়ে কে যেনো মোটর চালু করলো রিজার্ভার ফিল আপ করতে, মাথার নিচে ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ আপনার মনটাকেই নিয়ে গেলো অন্য এক পরিবেশে। গহীন বনে জলপ্রপাতের ঠিক নিচে দাড়ায়ে আছেন আপনি, পানির তোড়ে ভিজে যাচ্ছে সারা দেহ আর পানির আওয়াজে তোলপাড় মন জুড়ে, ওদিকে ঘ্রাণ পাচ্ছেন সবুজ বনানী আর আর্দ্র নির্মল বাতাসের….

এইযে ভাই, ফিরে আসুন বাস্তবে 🙁 জানি, ব্যস্ততার শহরে সেরকম অনুভুতি খুব কম ই পাওয়া যাবে । আপনি চাইলে অবশ্য ফিলিংস-টা তরলাকারে বোতলে ভরে দিতে পারি। তরল অনুভুতিটাকে আদর করে “আল্টিমেইট ম্যান” বলেই ডাকি আমি…!

Description

শাহরিয়ার চোখের সামনে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরে প্রেসক্লাব থেকে পল্টন যাওয়ার রাস্তা ঘেষে বসে আছে, একবার রাস্তা দেখছে আবার পরক্ষণেই হাতের পাশে রাখা কাঠটার দিকে তাকাচ্ছে । সাই সাই করে গাড়ি চলে যাচ্ছে, তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ই নেই, একমনে তাকিয়েই আছে… আজ রোদটা পড়েছে জবর! দশ বারো কদম পরপর ই ভ্রাম্যমান থুক্কু ভ্যান্যমান লেবুর শরবতের দোকান, তবু সবগুলোতে ক্রেতা ভরপুর। বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নিচ্ছে সুয্যি মামা। ধীরে ধীরে শাহরিয়ারের আশপাশে উৎসুক লোক জমা হচ্ছে, গরম উপেক্ষা করেই তারা দাড়ায়ে আছে কি হয় সেটার অপেক্ষায় । দরদর করে ঘামতে ঘামতে ভিজে উঠা কাপড়টা পরক্ষণেই তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে — এরকম কয়েকবার হয়ে উঠার পরে শাহরিয়ার কেমন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেলো, মাথা আর কাজ করতে চাইছে না । নিজকে খুব করে বুঝালো, অনেক কাজ বাকি এখনো, উত্তরা-১৩ তে একজায়গায় বড় গর্ত করছে তার লোক কয়েকদিন ধরে, আজ সেই গর্তে বিশালাকার একটা ট্রাংক বসানোর পালা…!
.
ভাবতে ভাবতেই কেমন একটা পোড়া গন্ধ টের পেলো সে, মনটা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো সাথে সাথেই! ম্যাগনিফাইং গ্লাস রাস্তার দিকে তাক করে দেখলো, গরমের চোটে রাস্তার ঢালাই পিচ অল্প অল্প গলা শুরু করেছে যেনো, পোড়াঘ্রাণ সেখান থেকেই আসছে । পাশে থাকা ‘ পলিশ – বার্নিশ করা’ কাঠের টুকরার দিকে নজর এবার, উহু, ভীষণ গরম হয়ে উঠলেও ফাটল ধরার কোন নাম গন্ধ নেই । উৎসুক চোখগুলা উপেক্ষা করে স্মার্টফোন বের করে সে টাইপ করলো ফেইসবুক স্ট্যাটাস
” আসলে কাঠফাটা রোদ বাগধারা-টা এখনকার সময়ে আর প্রয়োগেয় না ; পিচগলানো রোদ-টাই এখন ট্রেন্ডি আর বাস্তবসম্মত ” ! দিব্যচোখে শাহরিয়ার দেখতে পেলো, স্ট্যাটাসে কয়েকশ লাইক, ৫০খানা শেয়ার, তিনখানা <3 !
.
মানুষের ভীড় থেকে নিজকে বের করে আনতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে । গন্তব্য এবার উত্তরা, যাওয়ার সময় ভ্যান ভাড়া করে ধোলাইখাল থেকে ট্রাংক-টা নিয়ে এরপর যেতে হলো । বিশশাল বড় ট্রাংক, ভেতরে অনায়াসে দুইতিনজন এটে যাবে … গর্ত ও কি কম বড়? সাত হাত লম্বা আর পাচ হাত চওড়া ! এখানে ত জটলা লেগে আছে গত চারদিন ধরেই, শাহরিয়ার ভেবে পায়না, মানুষের কি কোনো কাজকম্ম নাই যে সারাদিন এভাবে দাড়ায়ে থেকে মাটিকাটা দেখে!
.
গর্ত খোড়া শেষ প্রায়, মাটি সরানো হচ্ছে । “আর আধ ঘন্টা, এরপরেই…” — ভ্যানে ট্রাংকের পাশে বসে ভাবলো সে । রোদ খানিকটা পড়ে আসছে এখন, মৃদ্যমন্দ বাতাস-ও বইছে… কাজ শেষ। এবার ট্রাংকের খেল শুরু । প্রায় ৬জন মানুষ লাগলো ভ্যান থেকে লোহার বাক্সটা নামায়ে সেই গর্তে বসিয়ে দেওয়ার জন্য । শাহরিয়ার একজনকে বললো ঢাকনাটা খোলার জন্য, খুলতেই সে টুপ করে ট্রাংকের ভেতর লাফ দিয়ে আটকে দিলো ঢাকনাটা…!
.
দুইমিনিট যায়, পাঁচমিনিট যায়, ঢাকনা আর খোলে না.. সাত মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ডের সময় যখন সবাই ভাবলো এবার ঢাকনা ভেংগে ফেলে বের করতে তাকে, তখন টং করে শব্দ হয়ে খুলে গেলো ট্রাংকের মুখ-টা । শাহরিয়ারের লাল হয়ে উঠা মুখটা আনন্দে উদ্ভাসিত, সে সফল… পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে সে সোজা চলে আসে ঢাকায়, বাবা-বাড়ির বাইরে লুকিয়ে থাকে কাউকে না জানিয়ে… রাতে চুপিসারে বাসায় ঢুকে আব্বু-আম্মু’র মোবাইল আর আলমিরা থেকে কয়েক গোছা টাকা সরিয়ে নিয়ে আবারো চুপিসারে চলে যাওয়া.. গত কয়দিন পাগলাগারদ থেকে মোবাইলগুলোতে অনেক ফোন আসছে, রিংটোনের জ্বালায় অতিষ্ট সে ; গারদের বোধহয় টের পেয়ে গেছে পালিয়ে যাওয়াটা, তাই গার্জিয়ান কে জানাবে। তাই এই ব্যবস্থা… শাহরিয়ার ট্রাংকের ভেতরে গিয়ে ফোনের রেকর্ডার-টা ছেড়ে দিয়েছিলো, রেকর্ড করে নিয়েছে ভেতরের “শুনশান শব্দহীন” শব্দ-কে । সে ফোনে সাইলেন্ট মুডের রিংটোন সেট করবে সেটাকে…. -_-

আচ্ছা, বলতে পারেন, শাহরিয়ারের পাগলামি ব্যামো’র পেছনে কার হাত আছে? কোন সেই ঘটনা যেটার কারণে আজ তার এই হাল? ফোনদুটো যেহেতু শাহরিয়ারের কাছেই, ভেতরের খবর জানতে চলে যেতে হবে তার বাসাতেই। দরজা খুললেন বোধহয় তার বাবা, শাহজাহান সাহেব। আসার উদ্দেশ্য জেনে সোফায় বসতে বললেন। উনিও এসে বসলেন সামনে… শুরুতেই হাহাকারের স্বরে চিৎকার করে উঠলেন তিনি, ” সব দোষ পারফিউমেন্সের”!!

” আমার ছেলেটা সুঘ্রাণের বড্ড সৌখিন ছিলো, সে নিজের নাম ও দিয়েছিলো ফ্রেগরেন্স-ফ্রিক নামে! কত যে বডিস্প্রে আর ডিও পড়ে আছে তার কাবার্ডে! বিদেশ থেকে দামিদামি পারফিউম আনাতো.. হঠাৎ একদিন ফেসবুকে সে খুঁজে পায় পারফিউমেন্সকে [ ক্যান যে পেয়েছিলো :@ ] । তার পছন্দ ই বদলে যেতে থাকে, কাবার্ডের পারফিউম সেখানেই পড়ে রয়, শাহরিয়ার কিনতে থাকে একের পর এক আতর। আমার মনে আছে, সে বলত, কি দরকার আব্বু স্প্রে পারফিউম কেনার ; এইযে রোল অন গুলা থাকেও অনেক বেশি, ছড়ায় অনেক অনেক, দামের দিক থেকেও কতগুণে কম “!!

এরপর একদিন আমার ছেলে শখ করে কিনলো “আল্টিমেইট ম্যান”, পারফিউমেন্সের অইযে কি যেনো নাম, হ্যা মনে পড়ছে, আতরচি, অই ছোকরা-টা নতুন যেটা ইউকে থেকে আনায়েছিলো । আমাকে জিজ্ঞাসা করলো ছেলে আমার, ‘ বাবা কেমন ঘ্রাণ’? আমি শুঁকে বললাম, বাহ বেশ চনমনে মিন্ট মিন্ট ঘ্রাণ পাচ্ছি। ছেলে আমার সাথে তর্ক লাগিয়ে দিলো! ” নাহ বাবা কি যে বলো, এটা তো ‘২১২ ম্যান’ পারফিউমের ন্যায় ঘ্রাণ, জংধরা লোহার সাথে বেটে-ফেলা ঘাসের ঘ্রাণ “! আমি আর কথা বাড়াইনি.. সেদিন ছেলে ভার্সিটি গিয়েছিলো সে ঘ্রাণ-টাই লাগিয়ে, বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছিল ঘ্রাণ সম্পর্কে । রনি বলেছিলো এটার ঘ্রাণ মিইয়ে আসা ফুলের মতন, সিয়াম বলেছিলো কাষ্ঠল তামাকের মতন, পুলক বলেছিলো বৃষ্টিভেজা ইউক্যালিপ্টাস এর কথা…! একেকজন থেকে একেক কথা শুনে ওর মাথা আউলাতে থাকে, সেই আউলানো মাথায় শেষ পেরেক-টা মেরেছিলো ওর আম্মু, বাসায় ফিরতেই বলে উঠেছিলো, ” শাহরিয়ার, তোমার কাছ থেকে আদা আর মশলার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে কেনো?” …! আল্টিমেইট ম্যান ঘ্রাণ-টা বোধহয় গরমকালের, তাই ছেলে আমার বছরের অন্য সময় ঠিক থাকলেও গরমের সময় এর কথা মনে পড়লেই ওর মাথাটা আর কাজ করে না… আউলায়ে যায়…

→ শেষ একটু বকবক:
শাহরিয়ার চরিত্র-টা কাল্পনিক। তবে আল্টিমেইট ম্যান ইউজারদের এমন হয়ে উঠা-টা অস্বাভাবিক কিছুই না! যদি এখন বলি, শাহরিয়ার/তার বাবা/রনি-সিয়াম-পুলক/ তার মা, সব্বাই সঠিক ঘ্রাণ ই পেয়েছিলো ; মাথা আপনার চক্কর দিতে বাধ্য! আসলে আল্টিমেইট ম্যান এমন ই বর্ণচোরা, ইউজারের মানসিকতা আর সময় অনুযায়ী ঘ্রাণ বদলাতে থাকে ভয়ংকরভাবে!

Additional information

পরিমাপ

সাড়ে চার মিলি ( 4.5 mL ), পৌনে নয় মিলি ( 8.75 mL ), সাড়ে চৌদ্দ মিলি ( 14.5 mL )

2 reviews for আল্টিমেইট ম্যান

5 Star

50 %
1 review(s)

4 Star

50 %
1 review(s)

3 Star

0 %
0 review(s)

2 Star

0 %
0 review(s)

1 Star

0 %
0 review(s)

Reviewed by 02 customer(s)

  • Avatar

    Md. Swarup Hasnaine

    I like it 🙂

    July 16, 2020
    Verified Purchase
  • Avatar

    omar.faruque967

    Great fragrance. I would highly recommend this t anyone.

    May 4, 2019

Leave feedback about this

Your email address will not be published.